পঙ্গপাল ডেকে আনতে পারে মহামারী
পঙ্গপাল ডেকে আনতে পারে মহামারী
ঘাস ফড়িংয়ের সমগোত্রীয় প্রাণী এই পঙ্গপাল।বিশ্লেষকদের মতে, পৃথিবীর প্রাণিজগতের মধ্যে অত্যন্ত বিস্ময়কর আচরণ দেখাতে সক্ষম এই পঙ্গপাল। কেননা অন্য কোনো প্রাণী এই পতঙ্গের মতো এত বড় দল নিয়ে নাটকীয়ভাবে দ্রুত আবির্ভূত হয় না। আর্কিডিডি পরিবারে ছোট শিংয়ের বিশেষ এই প্রজাতিটি মূলত বিশাল বিশাল ঝাঁক বেঁধে একত্রে আক্রমণ সাজায়। এতেই মাঠের পর মাঠ ফসল উজাড় হয়ে যায় মুহূর্তে। প্রায় ১০ লক্ষাধিক পতঙ্গের একটি ঝাঁক প্রতিদিন ৩৫ হাজার মানুষের খাদ্য সাবাড় করতে সক্ষম।খাদের সন্ধানে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে মাইলেরপর মেইল পারিদেয়। পোকাগুলোর উপদ্রব ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। তাছাড়া মাটিতে পঙ্গপালের ডিম দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। এমনকি ২০ বছর পরেও পতঙ্গটির ডিম থেকে বাচ্চা হতে পারে।অতিবৃহৎ একটি ঝাঁক প্রায় ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। যেখানে প্রতি কিলোমিটারের ঝাঁকে ৪ থেকে ৮ কোটি পতঙ্গের অবস্থান।
ধর্মীয় গ্রন্থে পঙ্গপালের উল্লেখ
পঙ্গপালের ইতিহাস বহু পুরনো। প্রাচীন মিসরীয়দের কবরে এর ছবি দেখা যায়। এছাড়া গ্রিসের ইলিয়াডে এই পতঙ্গের কথা উল্লেখ রয়েছে। বাইবেল এবং কোরআন এর মতো ধর্মগ্রন্থেও পঙ্গপালের কথা বলা হয়েছে। ধর্মগ্রন্থে এই পতঙ্গকে ঈশ্বরের শাস্তিস্বরূপ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করা রয়েছে।
কতটা ভয়ঙ্কর এই পঙ্গপাল?
১৯৯৩ সালে ব্যাপক আকারে পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়েছিল পাকিস্তান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি কোটি টাকা মূল্যের ফসল ও গাছপালা। যার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মার্চে দেশটিতে আবারও পতঙ্গটি আঘাত হানে। তখন পাঞ্জাবের দক্ষিণাঞ্চল, খাইবার পাখতোনখোয়া এবং সিন্ধু অঞ্চলের প্রায় ৯ লক্ষাধিক একর জমির ফসল নষ্ট হয়। মূলত এর পরপরই দেশজুড়ে পঙ্গপালের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি পাকিস্তানে আক্রমণকারী পঙ্গপাল ভারতেও ঢুকতে শুরু করেছে।
ভারত-পাকিস্তানের বাইরে সৌদি আরবও পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে , পতঙ্গটির আক্রমণ দেশটির কৃষি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
আফ্রিকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ৭ কোটি ডলারের অনুদান চেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটির প্রধান মার্ক লোকক বলেন, আফ্রিকায় এই ভয়াবহ পঙ্গপাল উদ্বেগজনক হারে ফসল ধ্বংস করছে। ইতোমধ্যেই খাদ্য স্বল্পতায় থাকা পরিবারগুলো তাই আরও বিপাকে পড়েছে।
মন্তব্যসমূহ