সত্যম স্ক্যাম (Satyam Scam)!

 

আজ আমরা জানবো সত্যম স্ক্যাম সম্পর্কে। আমরা কমবেশি সকলেই শুনেছি  সত্যম স্ক্যাম (Satyam Scam) সম্পর্কে। এই সত্যম স্ক্যাম (Satyam Scam) সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানবো আজ। সত্যম স্ক্যাম (Satyam Scam) ভারতীয় স্ক্যাম জগতের একটি কালো দাগ। সত্যম ভারতের চতুর্থ বড়ো IT কোম্পনী ছিল।পাশাপাশি সত্যম কোম্পানিকে অনেক পুরুস্কারে অলংকৃত করা হয়েছিল। কিন্তু কিভাবে ডুবেগেল কোম্পানী ? কিভাবেই বা হলো এতবড়ো স্ক্যাম ?


১৯৮৭, বি.রামালিঙ্গম রাজু তার ভাই (শ্যালক)কে  নিয়ে হায়দ্রাবাদে  সত্যম কম্পিউটার নামের একটি  IT কম্পানী শুরুকরে।  সত্যম IT কোম্পনী শুরু করার আগে বি.রামালিঙ্গম রাজু  কটন মিলের ব্যবসা করতেন। ১৯৯১-১৯৯২ পর্যন্ত সত্যম কম্পিউটার  কোম্পানি  BSE তে লিস্টেড হয়ে যায় , আর ২০০১ এ নিউইয়র্ক ইস্টক এক্সচেঞ্জে লিস্টেড হয়ে যায়। সে সময় ভারতের দ্রুত উন্নতির শিকড়ে পৌঁছানো কোম্পানি গুলির মধ্যে সত্যম কম্পিউটার একটি। আর এজন্য সত্যম কম্পিউটার  কোম্পানী আর বি.রামালিঙ্গম রাজুকে অনেক পুরুস্কারে সম্মানিত করাহয়। সত্যম কোম্পানির উন্নতি  খুবই দ্রুত হচ্ছিল । কিন্তু সেই সময় রিয়েলষ্টেট ব্যবসার অগ্রগতিও ছিল  খুবই  ভালো । আর এই  রিয়েলষ্টেটের উন্নতি   বি.রামালিঙ্গম রাজুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হায়দ্রাবাদে সে সময় রিয়েলষ্টেটর দাম খুব দ্রুত বাড়ছিল। বি.রামালিঙ্গম রাজু হায়দ্রাবাদসহ  আরো অনেক জায়গায় নিজের নামে  ও ফেমিলি মেম্বারের নামে  জমি কিনতে সুরু করে দেয়। কিন্তু একসঙ্গে প্রচুর জমিতে ইনভেস্টমেন্ট রাজুর পকেটে টান পড়তে শুরুকরে। রাজু জমি কেনার টাকার জন্য সত্যম কম্পিউটার কোম্পানির ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টে মেনুপুলেট করতে শুরু করে। অর্থাৎ সত্যম কম্পিউটার কোম্পানির টাকা চুরি করতে শুরুকরে। সত্যম কম্পিউটার কোম্পানির উন্নতি শেয়ার মার্কেটে মেনুপুলেট করে বাড়িয়ে নিজের ও শ্যালকের শেয়ার বেংকে বন্দক রেখে প্রপার্টি কিনতে থাকে। প্রপার্টি কিনতে রাজু ৩৬৫ টি কোম্পানি খুলে ফেলেন। ঐ সব কোম্পানির মালিক ছিল খাতাকলমে রাজুর পরিবারের সদস্য,কম্পানির কর্মচারী ,রাজুর পরিচিত সকলে। আর নিজের অনেক বন্ধুকে ওই কোম্পানির ডাইরেক্টর বানিয়ে দিয়েছিল। 

   

রাজুর কাছে অগ্রিম খবর ছিল হায়দ্রাবাদের মেট্রোলাইনের রুট কোথাথেকে কোথায় যাবে। রাজু খুব দ্রুত মেট্রোলাইনের কাছাকাছির সম্পত্তি কিনতে শুরু করে দে। রাজু জানতো মেট্রো চালু হলেই ঐ সম্পত্তির দাম কয়েক গুন্ বেড়ে যাবে।রাজু চেয়েছিল এই সম্পত্তি বেশি দামে বিক্রিকরে সত্যম থেকে নেওয়া টাকা মেকাপ করে দেবে। আর এটা কেউ বুঝতে পারবেনা। 

 সত্যম কম্পিউটার কোম্পানির বেশি সেল দেখাবার জন্য রাজু জালি সেলস পেপার বানাতে শুরু করে। রাজু ৭০০০ জালি সেলস পেপার বালিয়েছিল। এবং বেংক স্টেটমেন্টকেও রাজু মেনুপুলেট করে। সত্যম কম্পিউটারের শেয়ারের দাম বাড়তেই থেকে। কিন্তু সত্যিকারের লাভ ও দেখানো লাভের মধ্যের গ্যাপ বাড়তেই থেকে। 

এভাবেই কিছু বছর চলার পর ২০০৮ এ রিয়েলষ্টেট মার্কেটের পতন দেখাদেয়। রাজু এবার রিয়েলষ্টেটের লাভ তুলে সত্যম কম্পিউটার কোম্পানিতে হয়া ফারাককে মেকাপ করতে প্রায় অপারক হয়ে পরে। রাজু এবার নতুন বুদ্ধির প্রয়গ করে। সে সত্যম কোম্পানির হয়ে দুটি রিয়েলষ্টেট কোম্পানি কিনতে চায় । যে কোম্পানি তার নিজের ছিল। নিজের কোম্পানি নিজে কেনাতে কোনো টাকার লেনদেন না হওয়াতে সে বোঝাতে সক্ষম হবে  যে সত্যম কোম্পানি তার লাভের টাকায় দুটি নতুন কোম্পানি কিনেছে। কিন্তু তার শেয়ার হোল্ডারদের এ কাজ পছন্দ হলোনা। ফলে সত্যমের শেয়ার দ্রুত পড়তে শুরু করে। এতে রাজু চাপে পরে তার নিজের কোম্পানি আর কেনা হয়না। 

এই প্ল্যান ফেল হতেই সত্যমেরে  ডাইরেক্টর  পদত্যাগ করেন। এই প্ল্যান ফেলহতে দেখে রাজু ৭ জানুয়ারি ২০০৯ এ সিকার করে নেয় যে সে সত্যমের লেনদেনকে এতদিন মেনুপুলেট করে কোম্পানির লাভ দেখিয়েছে। রাজু জানিয়েছে বেলেন্সশিটে দেখানো সংখ্যা আর আসল বেলেন্সশিটের সংখ্যার মধ্যের পার্থ্যক্য ৭ হাজার কোটি টাকার। রাজুর সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির ডাইরেক্টর আর অডিটরের ওপরেও প্রশ্ন তোলা হয়। PWC  ছিল সত্যমের এডিটর। সেবি PWC র ওপর দু-বছরের নিষেধাগ্যা জারি করে। US  ইস্টকমার্কেট PWC র উপর ৬ মিলিয়ন ডলারের ফাইন চাপিয়ে দেয়। 

৯ জানুয়ারি ২০০৯ এ রাজু আর তারভাই বি.রামারাজুকে এরেস্ট করা হয়। এই স্ক্যাম এর পরেই সরকার সত্যমের জন্য নতুন বোর্ড মেম্বার তৈরী করে এবং কোম্পানিকে ডুবেযাওয়ার হাতথেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে টেক-মেহেন্দ্রা সত্যমকে কিনেনেয়। এবং কোম্পানির নাম করেদেওয়া হয় মহেন্দ্র সত্যম। 

CBI  এর অনুসারে রাজু মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাঠিয়ে তা পুনরায় দেশে ফিরিয়ে বেনামী সম্পত্তি কিনতো। রাজু এবং ৪৪ লোকের নামে ও  রাজুর ১৬৬ কম্পানির নামে   মানিলন্ডারিং কেসের চার্জেস লাগিয়েছে। রাজু আর তার পরিবারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাহয়। সেবী রাজু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে বেআইনী ট্রেডিং এর কেস করে এবং চার্জেস চাওয়া হয়। এর সঙ্গে ১৪ বছর সিকিউরিটি মার্কেটে কোনো রকম ডিল এর উপর নিষেধাগ্যা জারি করে। সঙ্গে রাজু ও তার সহযোগীদের ৭ বছরের জেল হয়। রাজু  আর তার ভাই এর ৫.৫ কোটি ফাইন করা  হয়। 

এই স্ক্যাম বাইরে আসার আগে সত্যম এর নাম ডাক খুব ভালো ছিল। সত্যম ভারতের চতুর্থ বড়ো IT কোম্পনী ছিল। 


 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আলকুশী চমকে দেওয়ার মতন একটি গাছ

10 টি বিখ্যাত লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি আর্টওয়ার্কস

নাগাল্যান্ডে কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ !